অবশেষে
বিতর্কিত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শুরু হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে
সনাতন পদ্ধতিতে ভবন ভাঙতে হাতুড়ি চালানো হবে। ভবনটি ভাঙার জন্য সময় দেওয়া
হবে ছয় মাস। তবে এ কাজে ব্যবহৃত হবে কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি। রাজধানী
উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক
রায়হানুল ফেরদৌস সোমবার সময়ের আলোকে এসব তথ্য জানান।
তিনি আরও বলেন,
চলতি সপ্তাহের শেষে ভবন ভাঙার কাজ শুরু করার কথা ছিল, কিন্তু ভবনের ভেতরে
এখনও বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের বেশ কিছু মালামাল রয়ে গেছে। এসব মালামাল সরিয়ে
নিতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হলে তাদের আরও এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়।
এ জন্য আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে ভবন ভাঙার কাজ শুরু করা হবে। ২০১১ সালের
৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি
ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সেটি ভেঙে ফেলতে
নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন
আপিল বিভাগে খারিজ হয়। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ।
প্রথমে ছয় মাস এবং পরে সাত মাস সময় দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত বছর আবার এক বছর
সময় বাড়ানো হয়। সে সময় ভবিষ্যতে আর সময় চাইবে না বলে মুচলেকা দেয় বিজিএমইএ।
সেই সময় শেষ হয় ১২ এপ্রিল। এরপর ১৬ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়
রাজউক। হাতিরঝিলে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০০৬ সালের
দিকে। জলাশয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন
পরিবেশবাদীরা। রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, ভবন ভাঙার সময় পরিবেশগত দিক ও
জানমালের নিরাপত্তার দিকটি বিশেষভাবে দেখা হবে। ভাঙার কাজে ফায়ার সার্ভিস ও
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞও থাকবেন।
পোশাকশিল্প
মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার বিষয়ে রাজউক গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর
সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করে। সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স,
ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ, পিঅ্যান্ডএস এন্টারপ্রাইজ, চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ
ও সামিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়।
এদের মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার সর্বোচ্চ দরদাতা হয় সালাম অ্যান্ড
ব্রাদার্স। তবে রাজউকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিশেষ ত্রুটির কারণে
সর্বোচ্চ দরদাতাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ফোরস্টার
এন্টারপ্রাইজকে ভাঙার কাজে নির্বাচিত করা হয়। চট্টগ্রামের এই ঠিকাদারি
প্রতিষ্ঠান রাজউককে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেবে। রাজউক সূত্রমতে,
প্রথমে আধুনিক বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরকের মাধ্যমে (কন্ট্রোলড ডিমোলিশন)
ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু ভবনটিতে কয়েক কোটি টাকার রড আছে। এ ছাড়া
আছে রঙিন কাচ ও মূল্যবান বাথরুম ফিটিংস। নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরকের মাধ্যমে
ভাঙা হলে ভবনের রডসহ মূল্যবান এসব সামগ্রী কাজে লাগানো যাবে না। তাই সনাতন
পদ্ধতিতে ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়। ২ লাখ ৬৬ হাজার বর্গফুটের বিজিএমইএ ভবনে
তিনটি বেসরকারি ব্যাংক ও ৩৭টি প্রতিষ্ঠানেরও অফিস ছিল।