তুহিনকে যে কারণে নির্মমভাবে হত্যা করলেন বাবা!
সময়ের আলো ডেস্ক
|
পেটে একটি নয়, দু'টি ছুরি ঢুকিয়ে হত্যা করা হয় শিশু তুহিনকে। বর্বরতার এখানেই শেষ নয়। তার দুই কান ও গোপনাঙ্গ কেটে নেয়া হয়। পরে পাঁচ বছর বয়সী ওই শিশুর নিথর দেহ ঝুলিয়ে রাখা হয় কদম গাছের ডালে। এছাড়া পেটে ঢোকানো ছুরিতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে দু'জনের নাম লেখা হয়। ঘটনার দিন শিশু তুহিনকে ঘুমন্ত অবস্থায় তার বাবা আব্দুল বাছির ঘর থেকে বের করে নিয়ে যান। এরপর তুহিনের বাবা, চাচা ও চাচাতো ভাই মিলে হত্যা করেন। এরপর তুহিনের পেটে দুটি ছুরি বিদ্ধ করে গাছে ঝুলিয়ে দেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন। তুহিনের বাবা একটি হত্যা মামলার পাশাপাশি আরও দুটি মামলার আসামি। এ এলাকায় আরও দুটি খুনের ঘটনা ঘটে। ওসব মামলার আসামি তুহিনের বাবা-চাচা এবং চাচাতো ভাইসহ অন্যরা। তবে তুহিন হত্যায় জড়িত মূলত তিনজন। তারা হলেন বাবা আব্দুল বাছির, চাচা নাছির উদ্দিন ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার। মূলত প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই তুহিন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, পারিবারিক বিরোধ ও হত্যা মামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে সন্তান তুহিনকে বলি দিয়েছেন বাবা আব্দুল বাছির। আগে থেকেই আব্দুল বাছির প্রতিপক্ষের করা হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন তুহিনের বাবা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে শিশু তুহিনের পরিবারের বিরোধ দীর্ঘদিনের। ২০০৫ সালে ওই গ্রামে মুজিব নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। নিহত মুজিব আনোয়ার মেম্বারের আত্মীয়। এরপর ২০১৫ সালে নিলুফা নামে এক নারীকে হত্যা করা হয়। নিহত নিলুফা তুহিনের বাবা আব্দুল বাছিরের আত্মীয়। তবে দুটি হত্যা মামলার আসামি হন তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির। এ নিয়ে গ্রামে বিরোধ দেখা দেয়। নিলুফা হত্যা হামলায় আসামি হওয়ার বিরোধকে কেন্দ্র করে আব্দুল বাছিরের সঙ্গে আনোয়ার মেম্বারের পরিবার বিভক্ত হয়ে যায়। সেই সঙ্গে গ্রামে শুরু হয় আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। মাঝে দীর্ঘদিন তাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে না এলেও শিশু তুহিন হত্যাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ পায় দীর্ঘদিনের ক্ষোভ। এদিকে, তুহিন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিতে ছালাতুল ও সোলেমান নামে দুজনের নাম লেখা রয়েছে। তারা দুজন মূলত আনোয়ার মেম্বারের লোক। ছুরিতে প্রতিপক্ষের দুজনের নাম লেখা দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় পূর্ববিরোধকে কেন্দ্র করে তুহিন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ছুরিতে যে দুই ব্যক্তির নাম লেখা রয়েছে তারা মূলত আনোয়ার মেম্বারের লোক এবং তুহিনের পরিবারের প্রতিপক্ষ। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে দুজনের নাম ছুরিতে লেখা হয়েছে। তুহিনের পরিবারের সঙ্গে তাদের বিরোধ দীর্ঘদিনের। তবে দুটি ছুরির ওপর থেকে হাতের ছাপ ও যে নামগুলো লেখা আছে তা হ্যান্ড রাইটিং বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে প্রতিবেদন আসার পরই আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে। এর আগে বিকেলে তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, চাচা আব্দুর মুছাব্বির এবং প্রতিবেশী জমশেদ আলীকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। একই সময় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তুহিনের আরেক চাচা নাছির উদ্দিন ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার। তারা পাঁচজন পুলিশ হেফাজতে। |