আইনজীবীর সহকারী হত্যা মামলার রায়
একই পরিবারের ৮ জনসহ ১২ জনের ফাঁসি
আদালত প্রতিবেদক
|
জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবীর সহকারী মোবারক হোসেন ভূঁইয়া হত্যা মামলায় একই পরিবারের আটজনসহ ১২ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ফাঁসির আদেশের পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করেছেন আদালত। সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক মো. মনির কামাল জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া ওরফে মহুব, মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া ওরফে বাদল ভূঁইয়া, আফজল ভূঁইয়া, এমদাদুল হক ওরফে সিকরিত ভূঁইয়া, নয়ন ভূঁইয়া, ভুলন ভূঁইয়া ওরফে ভুলু, এমদাদুল হকের স্ত্রী সুলতানা আক্তার, মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেন দিলীপ, রুহুল আমিন, শিপন মিয়া, নিলুফা আক্তার ও বিধান সন্যাসী। আসামিদের মধ্যে বিধান সন্যাসী, দেলোয়ার হোসেন, নিলুফা আক্তার ও সুলতানা আক্তার পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। রায় ঘোষণার পর উপস্থিত আসামিদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অন্যেিদক এই মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে পলাতক তাসলিমা আক্তার ও শামীম ওরফে ফয়সাল বিন রুহুলকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার দায় থেকে জয়নাল আবেদীনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের ছোটভাই ও মামলার বাদী মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া। তিনি এই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি মাহবুবুর রহমানও রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মো. জামালউদ্দিন এবং সেলিনা আক্তার রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও রায়ে আসামিদের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলো। এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করবে বলে জানান তারা। মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার গোথালিয়া ভূঁইয়াবাড়ির মৃত ইশাদ ভূঁইয়ার ছেলে মোবারক হোসেন ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা জজকোর্টে আইনজীবীর সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভিকটিম মোবারক হোসেনের পরিবারের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে আসামিদের বিরোধ ছিল। ওই বিরোধের জেরে ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর গোথালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে মৃত্তিকা প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে আসামিরা মোবারক হোসেনের পেটে বল্লম দিয়ে আঘাত করে। এতে মোবারক হোসেন মারা যান। পরদিন মোবারকের ছোটভাই মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া ১৬ জনকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে ১৬ জনকে আসামি করা হলেও তাদের মধ্যে একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তার বিচারের বিষয়টি চলে যায় শিশু আদালতে। ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি বাজিতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক মকবুল হোসেন মোল্লা আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য সরকার ২০১৭ সালের নভেম্বরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। একই বছর ১৭ ডিসেম্বর একই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগপত্রভুক্ত ৩১ জন সাক্ষীর বিভিন্ন সময়ে ২৩ জন সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। এছাড়া আসামিপক্ষে ১১ জন সাফাই সাক্ষ্য প্রদান করে। |