মরমী গানে মুখরিত লালনের আখড়া বাড়ি
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
|
ভবের হাটে চলছে বাউলদের আরাধনা, মরমী গানে মুখরিত লালনের আখড়াবাড়ী। চলছে লালনের মর্মবাণীর উপলব্দী অত:পর খাঁটি মানুষ হবার প্রাণান্তর চেষ্টা। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার এমন সাধুর হাট যেন বিশ্বের কোথাও নেই। আধ্যাতিক বাউল সাধক ফকির লালন সাইয়ের ১২৯ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের আখড়াবাড়ীতে বসেছে এমনই সাধুর হাট। গুরুকার্যের মধ্য দিয়ে বাউলদের সাধুসংঘের যে মূল আনুষ্ঠানিকতা সেটা শুরু হয়েছে আজ সকালে। তাই সাঁইজির বারামখানায় দলে দলে উপস্থিত হচ্ছেন দেশে এবং বিদেশ থেকে আগত অসংখ্য বাউল এবং লালন ভক্ত অনুসারিরা। কিভাবে সোনার মানুষ হওয়া যায়, কিভাবে গুরুর নৈকট্য লাভ করা যায় সেই বুঝ নিতে গুরুভক্তিতে মগ্ম বাউলা। বাউল সাধকেরা মনে করেন লালনের মর্মবাণী বোঝা কঠিন, তাই এই বানী বুঝতে এবং ধারন করতে হলে একজন গুরুর সান্নিধ্যে আসা প্রয়োজন, মানুষ মানুষে ভজন সাধনেই প্রকৃত ধর্ম তাইতো লালন স্মরণোৎসবে একতারা দ্বোতারা আর ঢোল বাশির সুরে ও আধ্যাত্মিক গানে এখন প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে লালন আখড়াবাড়ি। এযেন এক ভিন্ন জগৎ। সাধুগুরুরা মনে করেন একমাত্র মানব ধর্মের মাধ্যমেই সমাজ থেকে লোভ হিংসা এবং হানাহানি দুর করা সম্ভব। লালন ভক্ত অনুসারী হৃদয় সাই বলেন, প্রতিবছর ফকির লালন সাইজির এই পুর্নধাম আখড়া বাড়ীতে দুটি উৎসব হয়, একটি হলো দোলপুর্ণিমা যা শিষ্য প্রোশিষ্য হয়ে এখনো চলমান, আরেকটি হলো লালন সাইজীর তিরোধান দিবস উপলক্ষে স্মরোনৎসব। এখানে শুধু মাত্র সাধু গুরুদের নিয়েই শুধু সাধুসংঘ নয়, লালন অনুরাগী লালন প্রেমীসহ আজ আমরা দেখছি ভিন্ন ভাষা ভাষির মানুষ ও আজ এই সাইজীর আখড়ায় তাদের পদধুলি দিচ্ছে। এটি মুলত অষ্টপ্রহর ব্যাপী একটি সাধূসংঘ। ফকির লালণ সাইজীর দর্শনের যে গভিরতা , সেই গভীর দিকটির আলোকপাত হয় সাইজীর এই আখড়াবাড়ীতে সাধুসংঘের মাধ্যমে। কেননা এখানে তার শিষ্য, প্রশিষ্য, লালন প্রেমি, লালন গবেষক বিশেষ করে সাধূ তত্বের নিগুড় বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। যদি আমি আমার রিপুর তাড়নায় তাড়িত থাকি, যদি এই যান্ত্রিক জীবনে যন্ত্র থেকে আমি আমার নিজেকে কিছুটা না সরিয়ে আনতে পারি, যদি আমার ভেতর থেকে রাগ হিংসা কাম প্রয়োজনের অতিরিক্ত যাহা তাকে যদি কিছুটা কাটসাট করতে না পারি, তাহলে ব্যাক্তিগত জীবনটা অতটা স্বস্থিদায়ক হবে না। লালন ভক্ত অনুসারী মানিক সাই বলেন, এখানে মানুষ, সাইজী বলেছে আগে মানুষ হও, কুলের বউ ঘোমটা খুলে, আইনা চলে, সাধুর সাধ বাজারে। এখানে সাধুর সাধ বাজারে যারাই এই সাধুর সাধটা ভোগ করতে পেরেছে সে সত্যিকারের মানুষ হয়েছে। এখানে সাইজীর আখড়ায় কোন হিংসা আছে দলাদলী আছে, এখানে মুসলমান হিন্দু খ্রিষ্টান সবাই আছে কিন্তু । এমনই জায়গা সাধুর চরন যার একবার দর্শন হয়েছে, মানব বাদী ধর্ম যে একবার মেনে নিয়েছে তার ভিতরে হিংসা গিবত কিছুই থাকে না। কোলকাতা থেকে আসা শীলা মিত্র নামের এক দর্শনার্থী জানান,আমি প্রথম এলাম বাংলাদেশে, আমার আত্মীয়রা থাকে ফরিদপুরে তো ওখান থেকেই এখানে আসা, জায়গাটা বেশ ভালো লাগলো, এবং একটা জিনিস বেশ ভালো লাগলো সেটা হলো এখানে কেউ হিন্দু বা মুসলিম বলে সেভাবে পরিচয় দিচ্ছে না। তাদের মধ্যে যে মানবিকতা বোধ কাজ করছে নিজেদের ব্যাক্তিগত অহমবোধ বা সেই জাতীয় কিছু নেই। এই ব্যাপারটা খুব ভালো লাগলো। অনেককে আমরা গোড়া ভাবতাম আসলে সত্যি তারা তা নন। লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষ্যে কালী নদীর তীরে বিশাল মাঠে জমে উঠেছে লালন মেলা। আর আখড়াবাড়ির ভেতরে ও বাইরে লালন অনুসারী, ভক্তদের খন্ড খন্ড সাধু আস্তানায় এখন চলছে একের পর এক লালনরে আধ্যাত্মিক গান। বিশাল এই আয়োজনকে ঘিরে নেয়া হয়েছে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা এমনটাই মন্তব্য করে কুষ্টিয়ার পুলিশ সপার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, কোন ধরনের অপৃতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য পুরো এলাকা জুড়ে সিসি ক্যামেরা সহ রাখা হয়েছে ওয়াস টাওয়ারের মাধ্যনে বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টুনি। |