ই-পেপার মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০১৯ ৬ কার্তিক ১৪২৬
ই-পেপার মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০১৯

আওয়ামী লীগে কোন্দলের শঙ্কা বিএনপিতে গ্রেফতার আতঙ্ক
সুমন কুমার রায় টাঙ্গাইল
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ২২.১০.২০১৯ ১:২৮ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ

আওয়ামী লীগে কোন্দলের শঙ্কা বিএনপিতে গ্রেফতার আতঙ্ক

আওয়ামী লীগে কোন্দলের শঙ্কা বিএনপিতে গ্রেফতার আতঙ্ক

সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইলের আটটি আসনেই জেতেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করায় জেলায় একক আধিপত্য ধরে রেখেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে আগামী পৌর নির্বাচন ঘিরে দলটিতে কোন্দল চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন সিনিয়র নেতারা। আর এই পৌরসভা নির্বাচনে দলের চার প্রার্থী মাঠে নেমে পড়েছেন। তারা হচ্ছেন বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন, আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক প্যানেল মেয়র সাইফুজ্জামান সোহেল, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল হক আলমগীর ও সাধারণ সম্পাদক এমএ রৌফ। 

এদিকে জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে ও নিজেদের কোন্দল চরম আকার ধারণ করায় নামমাত্র কর্মসূচি পালন করছে। পাশাপাশি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি উত্তর ও দক্ষিণ দু’ভাগে ভাগ করার পরিকল্পনায় নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এছাড়া জেলা জাতীয় পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর তেমন কোনো দলীয় কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। জাতীয় পার্টির রাজনীতি অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে সেই কর্মচাঞ্চল্য নেই, নেই কোনো কার্যক্রমও। জেলা ও উপজেলার অনেক দাপুটে নেতারাও এখন রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। জেলা কমিটির শুরুতে দলের মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত থাকলেও বর্তমানে সভাপতি ও সম্পাদক দল সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করছেন, এমনটিই দাবি অনেকের। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অন্য সংগঠনগুলোতে প্রকাশ্যে কোন্দল রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলা নিয়ে খান পরিবার বেকায়দায় থাকায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীই এখন দৃশ্যপটে।

২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে বর্ষীয়ান নেতা ফজলুর রহমান খান ফারুককে সভাপতি ও সাদত বিশ^বিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভিপি ও বর্তমানে টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামকে সম্পাদক করে ১০১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। 

এক সময় টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন সিদ্দিকী পরিবার ও খান পরিবার। রাজনীতিতে এই দুই পরিবারের অবস্থা এখন শোচনীয়। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর দলটির রাজনীতি খান পরিবারের দখলে চলে আসে। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় জড়িয়ে পড়ায় খান পরিবারের দাপটে চিড় ধরে। এই মামলার আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। তার অন্য তিন ভাই এখনও পলাতক। জেলা আওয়ামী লীগের সব কমিটি থেকে খান পরিবারের চার ভাই আমানুর রহমান খান রানা, সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়িক নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন ও ছাত্রনেতা সানিয়াত খান বাপ্পা বাদ পড়ায় তাদের অনুসারীরা কিছুটা কোণঠাসা। তারপরও গত সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন থেকে আমানুর রহমান খান রানার বাবা আতাউর রহমান খান নৌকার টিকেটে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। 

ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ, কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগ, সখীপুর ও মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল প্রকাশ্যে রয়েছে। কোন্দল শুরু হয়েছে গত উপজেলা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া ও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় এই কোন্দলের সূত্রপাত হয়। গত ১৯ মার্চ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমকে সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আরো কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে আগামী পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমে পড়েছেন একাধিক নেতা। এতে করে পৌর নির্বাচনকে ঘিরে দলে আবার কোন্দলের সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সাংগঠনিকভাবে এখন অনেক শক্তিশালী। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভেতরে কোনোরকম কোন্দল নেই। উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে কিছুটা কোন্দল থাকলেও তা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই সমাধান হয়ে যাবে।

এদিকে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি দু’ভাগে ভাগ হচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণ হয়ে আলাদাভাবে দলীয় কার্যক্রম চলবে। এরকম খবর ছড়িয়ে পড়ায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। সে সঙ্গে এর ভালোমন্দ বিভিন্ন দিক নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণও। কেউ কেউ মনে করছেন, উত্তর-দক্ষিণে ভাগ করার মধ্য দিয়ে দলটিকে দুর্বল করা হবে। একটি সিন্ডিকেট এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখছে। এর মধ্য দিয়ে মূলত তারা তাদের স্বার্থ উদ্ধারে সফল হবে এবং দল হয়ে পড়বে দুর্বল। সুতরাং দলকে দু’ভাগ করা মানে হবে আত্মঘাতী। 

২০১৭ সালের ২৬ মে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর কৃষিবিদ শামছুল আলম তোফাকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবালকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪৮ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদন করেন। তারপর থেকেই পদবঞ্চিত একটি অংশ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। তারা দলের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচিও পালন করে। জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানান, কমিটি গঠনের পর থেকেই দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা কিছু কুচক্রী আওয়ামী লীগের সহায়তায় নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আওয়ামী লীগের সহায়তায় বিএনপি দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সমাবেশ মিছিলে হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে। 

কমিটি গঠনের পর থেকেই দলের একটি অংশ এর চরম বিরোধিতা করে। এরপর থেকেই টাঙ্গাইলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, আমাদের দলকে ভাগ না করাটাই ভালো। আর দল ভাগ হলে দলে কোন্দল দেখা দেবে। সাংগঠনিক কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়বে।



এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড-এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ।
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : [email protected]