দাবি আদায়ে ক্রিকেটারদের ১১ দফা
ক্রীড়া প্রতিবেদক
|
ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, সংক্ষেপে যেটি ‘কোয়াব’ নামে পরিচিত। অনেক দিন ধরেই ক্রিকেটারদের এ সংগঠনের দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম নেই। ক্রিকেটারদের স্বার্থ রক্ষার কোনো কিছুই এই সংগঠন দিয়ে হচ্ছিল না। সংগঠনের সভাপতি (নাঈমুর রহমান দুর্জয়) এবং সহ-সভাপতি (খালেদ মাহমুদ) যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অন্যতম পরিচালক, তখন তা হয়ই বা কি করে? এবার তাই শীর্ষ ক্রিকেটারর একাত্ম হয়ে নিজেদের অভিযোগ-অনুযোগ নিয়ে সরব হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা করেছেন ১১ দফা, দাবি আদায়ে দিয়েছেন ধর্মঘটের ডাক। সময়ের আলোর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো ক্রিকেটারদের সেই ১১ দফা আমাদের যে প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন আছে, কোয়াব, তারা ক্রিকেটারদের পক্ষে কথা বলবে, সেটির কোনো কিছু আমরা তাদের কার্যক্রমে পাইনি। তাই আমাদের প্রথম দাবি হচ্ছে, কোয়াবের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক যারাই আছেন, তাদের অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। যেহেতু এটা প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, আমরা ক্রিকেটাররাই নির্বাচনের মাধ্যমে পছন্দ করব, কারা এখানে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হবেন। দ্বিতীয় দাবি, আপনারা সবাই জানেন, কয়েক বছর ধরে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পরিস্থিতি কেমন। যেভাবে এই লিগ হচ্ছে, তাতে সব ক্রিকেটারই অসন্তুষ্ট। এখানে পারিশ্রমিকের একটি মানদণ্ড বেঁধে দেওয়া হচ্ছে, পাশাপাশি ক্রিকেটারদের অনেক সীমাবদ্ধতা দেওয়া হচ্ছে। আমরা যেভাবে আগে প্রিমিয়ার লিগ খেলতাম, যেভাবে ক্রিকেটাররা ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডিল করতেন, যেভাবে নিজেদের পারিশ্রমিক নিয়ে এবং কোন ক্লাবে খেলব তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম (এখন তা পারি না)। আমাদের দাবি, প্রিমিয়ার লিগ যেন আগের মতো করে আমরা ফিরে পাই। আমাদের তৃতীয় দাবি বিপিএল সংক্রান্ত। এবার বিপিএল অন্যভাবে হচ্ছে, যেটিকে আমরা সম্মান করি। আমাদের মূল দাবিÑ আগে যে নিয়মে বিপিএল হচ্ছিল, সেটি যেন পরের বছর থেকে চলে আসে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের সামঞ্জস্য যেন থাকে। আমরা সবসময় দেখিÑ বিপিএলে বিদেশি ক্রিকেটারদের অনেক পারিশ্রমিক দেওয়া হয়, স্থানীয়দের ওভাবে দেওয়া হয় না। এটা অবশ্যই করতে হবে। তার চেয়েও বড় ব্যাপার, বিশে^ অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হয়, যেখানে ক্রিকেটাররা ড্রাফটে নিজেদের গ্রেড নির্ধারণ করতে পারেন যে তারা কোন গ্রেডে থাকবেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরও এই অধিকার থাকা উচিত। তারপর নিলামে কেউ না থাকলে তাদের ব্যাপার। কিন্তু সম্মানটুকু ক্রিকেটারদের দেওয়া উচিত। দফা : ৪ ও ৫ (উপস্থাপক সাকিব আল হাসান সঙ্গে আরও কিছু দাবি তুলে ধরেন তিনি) প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমাদের ম্যাচ ফি অন্তত ১ লাখ টাকা হওয়া উচিত। আমরা এই দাবি অবশ্যই জানাচ্ছি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের বেতন অনেক কম। সেটি অন্তত ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। ক্রিকেটারদের অনুশীলন সুবিধা বাড়াতে হবে। জিম-মাঠ সবকিছু বাড়াতে হবে। ১২ মাসের জন্য কোচ-ফিজিও-ট্রেনার নিয়োগ দিতে হবে এবং তারাই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের একটি সিস্টেমের ভেতর নিয়ে আসবে। তাদের পরিকল্পনামতোই ক্রিকেটাররা কাজ করবে। এটি প্রতিটি বিভাগে করতে হবে। আমরা চাই না সবাইকে সব ট্রেনিং সেশন ঢাকায় করতে হবে। অবশ্যই বিভাগীয় পর্যায়ে নিজেদের ঘরের মাঠে করবে সবাই, তাহলেই আমাদের ক্রিকেটের প্রসার হবে। এটা হয়তো আজকেই হবে না। তবে পরের মৌসুমের আগে নিশ্চিত করতে হবে।আরও কিছু ছোট ছোট ব্যাপার আছে, আমাদের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য ও সংস্কৃতি বদলানোর জন্য যেগুলো জরুরি। যেমনÑ বল, যেটা আমাদের অনেক বড় সমস্যা। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমরা মানসম্মত বল পাই না। ওটা নিয়ে আমাদের অনেক ভুগতে হয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আসার পর অন্য বলে আবার মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। এটা যেন না করতে হয়। দৈনিক ভাতা মাত্র ১৫০০ টাকা। যে ফিটনেস দাবি করা হচ্ছে তাতে অনেক স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। ভালো হোটেলে থাকতে হবে। সেটা বিবেচনা করে যে পরিমাণ ভাতা ঠিক করলে ভালো হয়, সেটি যেন করা হয়। ভ্রমণ ভাতা কেবল ২৫০০ টাকা। এখন যে রাজশাহী থেকে কক্সবাজার যাবে খেলতে, তার তো বাসে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই! এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন ক্রিকেটাররা বিমান ভাড়া পায়। বিমানের টিকেট বিভাগ করুক, আমাদের আপত্তি নেই। টিম হোটেলে জিম ও সুইমিংপুল অবশ্যই দরকার। কারণ চার দিনের ম্যাচে একজন ক্রিকেটারের অনেক কষ্ট হয়। দিন শেষে তার রিকভারির জন্য জায়গা থাকতে হবে। ওয়ান বা টু স্টার হোটেলে যেখানে কোনো রকমে শুধু রুম আছে, সেখানে এটা সম্ভব নয়। আরেকটি হলো টিম বাস। মাঠে যে ধরনের বাসে আমরা যাওয়া-আসা করি, তা খুবই হতাশাজনক। অন্তত এসি বাস বা যে বাসে ক্রিকেটাররা স্বস্তিবোধ করবে সেরকম একটি বাসে যেন আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়। জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা এখন অনেক কম, এটি ৩০ জন করা উচিত। করতে হবে এবং বেতন বাড়াতে হবে। তিন বছর ধরে বেতন বাড়ানো হয় না। শুধু ক্রিকেটারদের ব্যাপারই নয়। গ্রাউন্ডসম্যানদের দেখেন, বিসিবিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে মাস শেষে মাত্র ৫ বা ৬ হাজার টাকা পায়। কোচের কথা বলেনÑ আমরা নিজেরাই বাংলাদেশি কোচদের দাম দিচ্ছি না। বিদেশি কোচদের বেতন আমাদের ২০টি কোচের বেতনের সমান। একটা সফরে দেখবেন বাংলাদেশের কোচের অধীনে দল ভালো করেছে কিন্তু পরের সফরেই তিনি নেই। আম্পারিং নিয়ে আলোচনা আছে। আম্পায়ারিংকে পেশা হিসেবে নিতে গেলে তাদের তো একটা আর্থিক সিকিউরিটি দিতে হবে। সেটা দেওয়া হয় না। সবমিলেয়ে আমাদের মূল দাবি, বাংলাদেশিদের যেন প্রাধান্য দেওয়া হয়। আমরা দুটি চার দিনের ম্যাচের টুর্নামেন্ট খেলিÑ জাতীয় লিগ ও বিসিএল। কিন্তু এক দিনের ম্যাচের টুর্নামেন্ট কেবল একটিÑ শুধু ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। আরেকটি টুর্নামেন্ট বাড়ানো উচিত। আগে জাতীয় লিগে চার দিনের ম্যাচের পর এক দিনের ম্যাচ হতো। জাতীয় লিগের ওয়ানডে টুর্নামেন্ট আমরা আবার খেলতে চাই। তাহলে এ সংস্করণে ম্যাচ আরও বেশি খেলতে পারব। পাশাপাশি বিপিএলের বাইরে আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হওয়া উচিত, যেটি হতে পারে বিপিএলের আগ মুহূর্তে। ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার থাকতে হবে। সেটি থাকলে আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারব। বিপিএল ও প্রিমিয়ার লিগের পাওনা টাকা যেন আমরা সময়মতো পাই। শেষবারের লিগ থেকে, আমরা ব্রাদার্স ইউনিয়নে যারা খেলেছি এখনও ৪০ ভাগ টাকা পাইনি। বোর্ডে অনেকবার যাওয়া হয়েছে, কোয়াবকে অনেকবার বলা হয়েছে। বারবার আসা-যাওয়া ক্রিকেটারদের জন্য আসলে দৃষ্টিকটু। আমরা আশা করবÑ যে সময়টি দেওয়া থাকবে, সে সময়ের মধ্যেই যেন টাকা শোধ করা হয়। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ক্ষেত্রে দুটির বেশি টুর্নামেন্টে খেলতে না দেওয়ার একটি নিয়ম আছে। কিন্তু জাতীয় দলের খেলা না থাকলে যদি খেলতে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা খেলতে পারব ও অনেক কিছু শিখতেও পারব। আমাদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিভাগের মান আমরা সবাই জানি। বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে এসেছে। ম্যাচে যাওয়ার আগেই অনেক দল জেনে যায় যে কোন দল জিতবে, কোন দল হারবে। এটা খুবই দুঃখজনক। এটি ঠিক করা খুবই জরুরি। একজন ক্রিকেটারকে উঠে আসতে হলে আমাদের পাইপলাইন ভালো করতে হবে। |