অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান দৈনিক সময়ের আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমি সাধারণ মানুষের সেবক। আর এর মাধ্যমেই কাপাসিয়াকে আমি দেশের শ্রেষ্ঠ উপজেলায় রূপান্তর করতে চাই।
আমানত হোসেন খান ছাত্রজীবনেই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। একজন পেশাদার আইনজীবীও তিনি। আর এই দুই পেশার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নৈকট্য অর্জন তাকে এক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করে গোটা উপজেলায়। অবশেষে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। গত ২৮ এপ্রিল উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আর জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বের চ্যালেঞ্জ ও পরিকল্পনার বিশদ শুনিয়েছেন সময়ের আলোকে।
রাজনীতির শুরুটা কীভাবে জানতে চাইলে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই জনগণের পাশে ছিলাম, তাদের কাছে থাকার চেষ্টা করেছি। এর পেছনে মূল অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল ফকির সাহাবউদ্দিন আহমেদ। যার সান্নিধ্যে আমি রাজনীতিতে আসি। জীবনে দুটি চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। তবে ফকির সাহাবউদ্দিনের প্রত্যাশা ছিল, চাকরি নয়, আমি যেন কাপাসিয়ার মানুষের জন্য কাজ করি। সে কারণে আমি অগ্রণী ব্যাংকের একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ছিঁড়ে ফেলে পণ করি চাকরি করব না। যেভাবেই হোক মানুষের পাশে থাকব। নানা প্রতিক‚লতার মধ্য দিয়েও নিজ এলাকা কাপাসিয়া ছেড়ে যাননি মন্তব্য করে আমানত হোসেন খান বলেন, আমি কাপাসিয়ার মানুষের সান্নিধ্যে থাকার চেষ্টা করেছি। এর উপহার হিসেবে কাপাসিয়ার মানুষ আমাকে আজ এই চেয়ারে বসিয়েছে।
তিনি বলেন, যদিও উপজেলা চেয়ারম্যান পদটা অতটা ক্ষমতাবান নয়। তবুও বলব, আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। প্রধানমন্ত্রী আমাকে এই চেয়ারের জন্য লড়তে মনোনয়ন দিয়েছেন। অবশেষে সবার ভালোবাসা ও সমর্থনে জয়ী হয়েছি। উনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। আর স্বাধীন বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের এলাকা কাপাসিয়া। তাই আমার বিশ্বাস, উপজেলায় ক্ষমতা যাই থাকুক না কেন? প্রধানমন্ত্রী ও কাপাসিয়ার সংসদ সদস্য বঙ্গতাজের কন্যা সিমিন হোসেন রিমির সহযোগিতা নিয়েই কাপাসিয়ার মানুষের জন্য পরিকল্পনামাফিক বড় পরিসরে কাজ করতে পারব। যেভাবেই হোক মানুষের সমস্যার পাশে থাকব এটিই আমার মূল পরিকল্পনা।
গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে মানবসেবার সংজ্ঞা শিখেছি। শুধু আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠী নয় দল-মতের ঊর্ধ্বে এসে কাজ করাই হলো প্রকৃত মানবসেবা। আমি একটি দল করি, এটা আমার আইডোলজি। আমার দল আমাকে মনোনীত করেছে। আমি কাপাসিয়ার সব মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। শুধু আমার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভোটে কিন্তু আমি নির্বাচিত হইনি। আমাকে সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। যেহেতু সাধারণ মানুষই সর্বময় ক্ষমতার উৎস, তাই আমি সাধারণ মানুষের সেবা করতে চাই। সে হোক আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা অন্য মতাদর্শের। এমনকি আমার ব্যক্তিগত শত্রæর ন্যায্য প্রয়োজনেও আমি তার পাশে দাঁড়াতে চাই। ছাত্রজীবন থেকেই মেধাবী এই পরিশ্রমী নেতা শুধু নিজের দল নয়, তার প্রতিপক্ষ সব দলের সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
এ বিষয়টি খোলাসা করতে বলেন, কাপাসিয়ার সাবেক এমপি মরহুম ডা. সানাউল্লাহ মিয়াও আমাকে অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ দিতেন। যিনি বিএনপির রাজনীতি করেছেন। এমনকি অনেক বিরোধীদলের নেতাকর্মীরাও নানা সময়ে আমাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। এজন্য আমার সঙ্গে তাদের একটি ভালো সেতুবন্ধ তৈরি হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ভোটের আগে মানুষকে আমার নতুনভাবে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে হয়নি। আমার সক্ষমতার মধ্যেই আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কাপাসিয়ার মানুষ আমাকে দীর্ঘদিন ধরে চেনে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল, আমি নৌকা নিয়ে নির্বাচন করি এবং ভোটে জয়ী হয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চেয়ারে বসি। জনপ্রতিনিধি হই। তাদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য তারাই দল-মত নির্বিশেষে, এমনকি প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে বিরোধী পক্ষের অনেক নেতাকর্মীও আমার নির্বাচনে ভূমিকা পালন করেছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আগে বিচ্ছিন্নভাবে অন্যের ক্ষমতা দিয়ে কাজ করেছি। এখন কিছুটাও হলেও এই চেয়ারের ক্ষমতায় নির্দিষ্ট পরিসরে কাজ করতে পারব। আপাতত আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সেভাবে নেই বটে। অবশ্য উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে কাউকে সেভাবে প্রতিপক্ষ মনে করি না। তারা সবাই কাপাসিয়ার মানুষ, এলাকার নাগরিক। আমি আমার সেবা, আচরণ ও কর্ম দিয়ে তাদের মন জয় করতে চাই। ভবিষ্যতে যাতে তারা আমার প্রতিপক্ষ না থাকে। আমি সেটাই করার চেষ্টা করব।
অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান বলেন, আগে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক ক্ষমতা ছিল; বৃহৎ বাজেট ছিল; কিন্তু এখন তা নেই। আমি আরও বেশি কাজ চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে কাজ দেওয়ার দাবি জানাই। কাপাসিয়ার সড়কে অনেক কাজ চলছে, কিন্তু ঠিকাদারদের একটু গাফিলতিতে কাজে মন্থরগতি দেখা যায়। সঠিক তদারকি নেই। দ্রুত উন্নয়ন ও টেকসই কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য যদি তদারকির দায়িত্ব উপজেলা পরিষদকে দেওয়া হয়, তাহলে জনগণ চাহিদামাফিক দ্রুত সেবা পাবে। একটি পরিবারকে নিয়ে নয়, এখন আমার প্রত্যেকটি পদক্ষেপ গোটা কাপাসিয়াকে নিয়ে। কেননা আমার কর্মের মাধ্যমে আমার দলের সম্মান ও সুনাম বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন বাস্তবায়ন সহজ হবে। তাই আমি কোনো ব্যক্তির নই। কাজের ব্যত্যয় ঘটলে দল ও আমার ব্যক্তিগত ইমেজ নষ্ট হবে।
বিগত দিনে যেভাবে জনগণের পাশে ছিলাম, এখন নতুন চেয়ারে থেকেও আরও বৃহৎ পরিসরে পাশে থাকব ইনশা আল্লাহ এ প্রতিশ্রুতি সবাইকে দিতে চাই। বৃক্ষের পরিচয় তার ফলে। আমি কথায় নই, কাজে বিশ্বাসী। কাজের মধ্য দিয়েই সবার কাছে মূল্যায়িত হতে চাই।