হাসি-কান্নায় জড়ানো মানুষের জীবন। হাসি-কান্নার মধ্য দিয়ে মানুষ বেড়ে ওঠে। বেঁচে থাকে। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশু কাঁদে-হাসে। কারণে কিংবা অকারণে। সর্বোপরি জগতের সবাই হাসে আবার কাঁদে। তবে প্রত্যেকের হাসি-কান্নার ভিন্ন ভিন্ন ধরন ও কারণ রয়েছে। কেউ হাসে উচ্চস্বরে, কেউ মুচকি। তদ্রুপ কেউ রোদন করে দুঃখে ব্যথায় যন্ত্রণায় কিংবা আল্লাহর ভয়ে। ইসলাম বলেÑ হাসি হোক মুচকি ও পরিমিত। আর চোখযুগল ভেজে উঠুক আল্লাহর ভয়ে।
অনর্থক হাসার মধ্যে কোনো ফল নেই। সফলতা নেই। আছে বিদ্রƒপ প্রহসন ও জাহান্নামে প্রবেশের লক্ষণ। অধিকন্তু কান্নায় রয়েছে সফলতা, রাব্বে কারিমের সন্তুষ্টি ও মানব প্রেম পাওয়ার উপকরণ। আল্লাহ চান মানুষ কম হাসুক। পরিমিত হাসুক এবং হাসি হোক মুচকি। কেননা বেশি হাসলে অন্তর মরে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তারা সামান্য হেসে নিক এবং তারা তাদের কৃতকর্মের বদলাতে অনেক বেশি কাঁদবে।’ (সুরা তওবা : ৮২)। এই আয়াতের তাফসিরে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘দুনিয়া সামান্য কয়েকদিনের আবাসস্থল। এতে যত ইচ্ছা হেসে নাও। অতঃপর দুনিয়া যখন শেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সানিধ্যে উপস্থিত হবে তখনই কান্নার পালা শুরু হবে যা আর নিবৃত্ত হবে না।’ (তাফসিরে মাযহারি)
আল্লাহর অনুমতিক্রমে জিবরাইল (আ.) রাসুল (সা.)-কে অনেক গোপন রহস্যের সংবাদ দিয়েছেন। তাকে দুনিয়ার জীবনে জান্নাত-জাহান্নাম দেখানো হয়েছে। তার জন্যই জান্নাতের সৃষ্টি। তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব। তার আগে-পরের সব গোনাহ মাফ করা হয়েছে। তবুও তিনি কম হাসতেন, কাঁদতেন বেশি। মানুষকেও কম হাসতে ও বেশি করে কাঁদতে উপদেশ দিতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেনÑ ‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তবে তোমরা খুব কমই হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে।’ (বুখারি : ৬৪৮৫; তিরমিজি : ২৩১৩)
কান্না অন্তরকে নরম করে। হৃদয়ে প্রশান্তি আনে। দুঃখকে হালকা করে। মানুষের মন রোদনকারীর প্রতি খুব সহজে আকর্ষিত হয়। আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীকে তিনি ভালোবাসেন। তার দরবারে গোনাহ মাফে ক্রন্দনকারীকে মাফ করে দেন। তার ভয়ে রোদনকারীর জন্য তিনি চির সুখ ও আরামের জায়গা জান্নাতের ফায়সালা চূড়ান্ত করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেনÑ ‘আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। যে রূপ দোহনকৃত দুধ আবার স্তনে ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।’ (তিরমিজি : ২৩১১)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা সেদিন তার (আরশের) ছায়া দান করবেন; যেদিন তার ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। তন্মধ্যে ওই ব্যক্তি একজন, যে নির্জনে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে; আর তার চোখ থেকে পানি ঝরে।’ (বুখারি ও মুসলিম)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি; তিনি বলেছেন, ‘দুটি চোখকে দোজখের আগুন স্পর্শ করবে না; প্রথম হলো সেই চোখ যা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। আর দ্বিতীয় হলো সেই চোখ; যা আল্লাহর পথে (জিহাদে) পাহারায় রাতযাপন করে। (তিরমিজি)
অনর্থক কথা বলা ইসলামে নিষিদ্ধ। মানুষকে হাসানোর জন্য বেহুদা অর্থহীন কথা বললে জাহান্নামে জ্বলতে হবে। তিরমিজি শরিফে ‘লোকদের হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলা’ অধ্যায়ে ইমাম তিরমিজি (রহ.) সনদের পরম্পরায় আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে লোক এমন কথাও বলে, যে প্রসঙ্গে সে মনে করে যে, তাতে কোনো অসুবিধা
নেই, এই জন্য সে সত্তর বছর জাহান্নামে অবস্থান করবে।’ (তিরমিজি : ২৩১৪)
মানুষ সব কথা বার্তায় হাসে না। অনেক সময় হাসির রঙ্গমঞ্চ সাজানো যায় মিথ্যা বলে। অথচ হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা বলা গোনাহের কাজ। ধ্বংসের কারণ। ইবনে হাকীম (রহ.) বর্ণনা করেছেন তার দাদা থেকে তার দাদা বলেন, আমি মুহাম্মদ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘সেই লোক ধ্বংস হোক, যে মানুষদের হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সে নিপাত যাক। সে নিপাত যাক।’ (তিরমিজি : ২৩১৫)
তাই আমাদের উচিত অধিক ও অনর্থক হাসার চেয়ে আল্লাহর ভয়ে বেশি বেশি কান্নাকাটি করা। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।