পবিত্র কোরআন অফুরন্ত রহমত ও বরকতের ভান্ডার। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশগ্রন্থ, অন্তরসমূহের আরোগ্যলিপি এবং মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত। বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি দুনিয়াদাররা যে সম্পদ জমা করে তা থেকে উত্তম।’ (সুরা ইউনুস : ৫৭-৫৮)। এই কোরআনের বদৌলতে আরবের বর্বর জাতি সৌভাগ্যবান জাতিতে পরিণত হয়েছিল। রাসুল (সা.) কোরআন দিয়েই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি ও সভ্যতা নির্মাণ করেছিলেন।
প্রতিটি মুসলমানের জন্য এই কোরআনের প্রতি কিছু দায়িত্ব ও অধিকার রয়েছে। নিচে এমন কিছু দায়িত্বের কথা তুলে ধরা হলো।
ঈমান আনয়ন করা : পবিত্র কোরআনের প্রথম হক হচ্ছে- আসমানি এই কিতাবের প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস রাখা। কোরআনের প্রতি ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে- এটা স্বয়ং আল্লাহর আলোচনা! এটা আসমান থেকে অবতীর্ণ কিতাব এবং এই কিতাবের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সব আসমানি কিতাব রহিত হয়ে গেছে। আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে- ‘তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের এবং আমি যে নূরগ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি তার প্রতি ঈমান আন। আর তোমরা যে আমল করছ আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।’ (সুরা তাগাবুন : ০৮)
কোরআন তেলাওয়াত করা : কোরআন তেলাওয়াত করা কোরআনের অন্যতম হক। আল্লাহ তায়ালা এ মর্মে নির্দেশ দিচ্ছেনÑ ‘তোমার প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা থেকে তেলাওয়াত কর।’ (সুরা আনকাবুত : ৪৫)। কোরআন তিলাওয়াতে রয়েছে বিরাট সাওয়াব। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি দেওয়া হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।’ (তিরমিজি : ২৯১০)।
কোরআন শ্রবণ করা : কোরআন শুধু তেলাওয়াত নয়, শ্রবণ করাও স্বতন্ত্র একটি আমল। হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, ‘আমাকে কোরআন পড়ে শুনাও, আমি বললাম, আপনার ওপর কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, আর আমি আপনাকে কোরআন শুনাব? তখন তিনি বললেন, আমি অপরের কাছ থেকে কোরআন শুনতে ভালোবাসি।’ (বুখারি : ৫০৪৯)
অপরকে শিক্ষা দেওয়া : কোরআন শিক্ষা দেওয়া অন্যতম উত্তম কাজ। হাদিসে এসেছে, হজরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’ (বুখারি : ৫০২৭)
কোরআন মুখস্থ করা : কোরআন হিফজ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তায়ালা নিজেই কোরআন হিফজ ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। আর আল্লাহর হিফজ ও সংরক্ষণের একটি প্রকার হচ্ছে কোরআন মুখস্থ করা। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি, আর আমিই তার হেফাজতকারী। (সুরা হিজর : ৯)। যে যত বেশি পরিমাণ হিফজ করবে পরকালে তার মর্যাদা তত উন্নত হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোরআনের বাহককে বলা হবে কোরআন পড়তে থাকো, আর ওপরে উঠতে থাক, তারতিল ও ধীরস্থীরভাবে পাঠ কর, যেমন দুনিয়াতে তারতিলের সঙ্গে পাঠ করতে। কেননা জান্নাতে তোমার অবস্থান সেখানেই হবে, যেখানে তোমার আয়াত পড়া শেষ হবে।’ (তিরমিজি : ২৯১৪)
অর্থ অনুধাবন ও চিন্তা-ভাবনা করা : কোরআনের অর্থ বুঝা ও অনুধাবন করা কোরআনের অন্যতম হক। কোরআনের অর্থ না বুঝতে পারলে এ মহাগ্রন্থ অবতীর্ণ হওয়ার অপার রহস্যের স্বাদ অনুভব করা সম্ভব নয়। পবিত্র কোরআনের অসংখ্যা আয়াতে আল্লাহ কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি তারা কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে?’ (সুরা মুহাম্মাদ : ২৪)
কোরআন অনুযায়ী আমল করা : কোরআন অনুযায়ী আমল করার অর্থ কোরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমরা যখন রাসুল (সা.)-এর কাছে কোরআনের দশটি আয়াত শিক্ষাগ্রহণ করতাম, এরপর ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পরবর্তী দশটি আয়াত শিক্ষা করতাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এই দশ আয়াতের ইলম ও আমল শিখতাম।’ (শারহু মুশকিলুল আসার : ১৪৫০)
কোরআনের সম্মান ও মর্যাদা : মহাগ্রন্থ কোরআন অপার সম্মান ও মহিমার অধিকারী একটি গ্রন্থ। তাই একে সম্মান করতে হবে। যথাযথ মর্যাদায় যত্ন করে রাখতে হবে। একই সঙ্গে কোরআনের সঙ্গে যারা থাকবে, যারা কোরআন তেলাওয়াত করবে ও
মুখস্থ করতে তাদের প্রতি সম্মান প্রর্দশন করা। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে কোরআনকে মহব্বত করল, সে যেন আল্লাহ ও তার রাসুলকেই মহব্বত করল।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ৩২৯)
কোরআনের প্রচার-প্রসার : কোরআনের প্রচার, প্রসার ও তা প্রতিষ্ঠার কাজ করা কোরআনের অন্যতম হক। নিজ ব্যবস্থাপনায় কোরআন শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, সাহায্য-সহযোগিতা করা, মকতব চালু করা, কোরআন বিতরণ করা প্রভৃতি কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ হচ্ছেÑ ‘হে রাসুল! তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা পৌঁছে দাও।’ (সুরা মায়েদা : ৬৭)। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে এই হকগুলো আমাদের
যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক